“ফ্রিল্যান্সিং কি?” এটা আমরা কম-বেশি সবাই জানি। তাই এই বিষয়ে ব্যাখায় গেলামনা। শুধু এক কথায় বলে রাখি, স্বাধীনভাবে কাজ করাকেই ফ্রিল্যান্সিং বলে।
আগে স্কিল পরে ফ্রিল্যান্সিং:
কাজ কিভাবে করবো (ফ্রিল্যান্সিং, নাকি স্থায়ী চাকুরি) তার আগের বিষয় কাজ শেখা। অর্থাৎ আগে আমাকে স্কিল্ড হতে হবে। আরো পরিস্কারভাবে বলতে গেলে, আগে আমাকে কোন বিষয়ের উপর দক্ষতা অর্জন করতে হবে; সেটা হতে পারে ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভলপমেন্ট, সফটয়্যার ডেভলপমেন্ট, এপস ডেভলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, কনটেন্ট রাইটিং ইত্যাদি। ছোট ছোট কাজ বা কোন সেক্টরের সাব-সেক্টরের কাজ (যেমন- ফেসবুক মার্কেটিং, ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং, লোগো ডিজাইন) শিখেও ফ্রিল্যান্সিং করা যায়।
ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য প্রস্তুতিঃ
ধরে নিলাম, আমাদের স্কিল বা দক্ষতা অর্জনের পর্ব শেষ। এবার কাজ পাওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে। স্নাতক বা মাস্টার্স পাশ করলেই চাকুরি হয়না। এর জন্য প্রথমেই আপনাকে সুন্দর একটা সিভি/রিজিউম তৈরি করতে হবে। আমি দেখেছি, মাস্টার্স পাশ করা ৫০% এর বেশি ছেলে-মেয়েরা নিজে ভালো একটা সিভি/রিজিউম তৈরি করতে পারেনা। চাকুরি পাওয়ার প্রথম ধাপ হচ্ছে ইন্টারভিউ। আর এই ধাপ অতিক্রম করার অন্যতম শর্ত নিজেকে সিভি/রিজিউমের মাধ্যমে আকর্ষনীয়ভাবে উপস্থাপন করা। আমরা যদি এই কাজটাই না পারি তাহলে স্কিল অর্জনের পরেও ইন্টারভিউ পর্যন্ত কখনোই পৌঁছাতে পারবোনা, আর বেকারত্বও ঘোচবেনা।
অনুরূপভাবে, স্কিল অর্জনের পর ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য আমাকে প্রথমেই ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে সুন্দর এবং আকর্ষনীয় প্রোফাইল বা পোর্টফলিও বানাতে হবে। আর তা যদি না করতে পারেন তাহলে আপনি যতোই স্কিল অর্জন করেন, আপনার কাজ পাবার কোনই সম্ভাবনা নেই।
চুড়ান্ত ধাপঃ সোনার হরিণ
প্রথম শ্রেণিতে মাস্টার্স পাস করলাম, সুন্দর- সমৃদ্ধ সিভি তৈরি করলাম, কিন্তু চাকরির সার্কুলারও দেখছিনা, সিভিও ড্রপ করছিনা। তাহলে কি চাকুরির আশা করা যাবে?
তেমনি, খুব ভালোভাবে স্কিল অর্জন করলাম, মার্কেটপ্লেসে আর্কষনীয় প্রোফাইল বা পোর্টফোলিও তৈরি করলাম। কিন্তু জবের জন্য বিড করছিনা (বিঃদ্রঃ আপওয়ার্ক বা ফ্রিল্যাসার.কম বা টপট্যাল, ইত্যাদিতে বিড এবং ফাইবার বা ফাইভ স্কোয়াড বা পিপল পার আওয়ার, ইত্যাদিতে গিগ মার্কেটিং)। তাহলে আপনার ফিল্যান্সিং এর স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে, তা আর কোনদিন আলোর মুখ দেখবেনা।
একটা কথা মনে রাখবেন, দেশের বাজারে একটা জব বা চাকুরিতে যদি আপনার প্রতিযোগি হয় ৫০০০ জন, মার্কেটপ্লেসে আপনার প্রতিযোগী হবে ৫০,০০০ জন। লোকাল মার্কেটে আপনার প্রতিযোগী লোকাল প্রার্থীরাই। কিন্ত মার্কেটপ্লেসে আপনার প্রতিযোগী সারা বিশ্বের প্রার্থীরা। তাই গ্লোবালি কাজ করতে গেলে নিজেকে গ্লোবাল স্টানডার্ড হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
আমি কিছু দিন আগে আপওয়ার্কে একটা রিসার্চ করেছিলাম। তখন সেখানে বাংলাদেশের ৪+ লাখ রেজিস্টার্ড মেম্বার/ফ্রিল্যান্সার ছিলো। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, ৫ ঘন্টা কাজ করেছে এরকম বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা ১ লাখের নিচে, ১০০ ঘন্টা কাজ করেছে এরকম বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সের সংখ্যা ৫০ হাজারের নিচে। বুঝতেই পারছেন, মার্কেপ্লেসে রেজিস্ট্রেন করলেই কিন্তু তাকে ফ্রিল্যান্সার বলা যায়না।
কাজেই ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে জার্নিটা খুব সহজ না। এতোক্ষণ হতাশাজনক কথা বললাম। এবার আশার কথা বলি। বাংলাদেশে যদি প্রতিদিন ১০০ জবের সার্কুলার হয়, মার্কেপ্লেসগুলোতে সেখানে প্রতিদিন ১ লাখ জবের পোস্টিং হয়। আপনি যদি প্রোপারলি স্কিল ডেভলপ করে প্রোপার ওয়েতে যথেষ্ঠ ধৈর্য নিয়ে লেগে থাকতে পারেন, আপনার ভবিষ্যত উজ্জ্বল। একবার যদি মার্কেপ্লেসে কয়েকটি কাজ সফলভাবে, ভালো রিভিউ নিয়ে সম্পূর্ণ করতে পারেন, আপনাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হবেনা। তখন হয়তো আপনিই অনেককে চাকুরি দিতে পারবেন। যারা সফল ফ্রিল্যাসার তারা কেউই সহজে সফল হয়নি। তারা প্রত্যেকেই দিনের পর দিন, মাসের পর মাস কম্পিউটারের সামনে পরে থাকতো, তারা ঠিক মতো খায়নি, ঠিক মতো ঘুমায়নি, ঠিক মতো গোসল করেনি। এভাবেই তারা আজ সমাজে সফল ফিল্যান্সার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
যারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন, আশা করছি, লিখাটি আপনাকে সচেতন করবে। শুভ কামনা রইলো।
বিঃদ্রঃ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যারা ক্যারিয়ার গড়তে চাচ্ছেন, তাদের কারো কোন পরামর্শ বা সহায়তার দরকার হলে অবশ্যই আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করবো। পেশাগত ব্যস্ততার কারণে তাৎক্ষণিক রেসপন্স না করলেও দেরিতে হলেও অবশ্যই সাড়া দিবো, ইনশাআল্লাহ।
স্কিল ডেভলপমেন্ট এবং ক্যারিয়ার গঠণ বিষয়ক আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজ লাইক দিতে পারেন এবং ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করতে পারেন।